ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুক্তিপণের দাবি স্পষ্ট করেনি জলদস্যুরা

মুক্তিপণের দাবি স্পষ্ট করেনি জলদস্যুরা

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার দীর্ঘ ৯ দিন পর জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র মুক্তিপণের জন্য জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দস্যুরা। তবে ২৩ নাবিক ও জাহাজটি ছাড়তে মুক্তিপণ হিসেবে কত দাবি করেছিল দস্যুরা- এই নিয়ে মুখ খুলছে না জাহাজ মালিক পক্ষের কেউ।

এ প্রসঙ্গে কবির গ্রুপের মুখপাত্র ও মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, ৯ দিন পর দস্যুরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে এখনও কথাবার্তা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমরা আশাবাদী। এখনও জাহাজসহ নাবিকদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কথা হয়নি। আশা করছি, শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সমাধান হবে। তবে ১৩ বছর আগে ২০১০ সালে একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ সোমালিয়ার দস্যুদের কবলে পড়েছিল। সে সময় ১০০ দিন পর জাহাজ ও সেখানে থাকা ২৬ জন মুক্তি পান। জাহাজসহ এ ২৬ জনকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত পেতে কবির গ্রæপকে দিতে হয়েছিল ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। তখন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ছিল ৬০ টাকার মতো। সেই হিসাবে প্রায় ১৮ কোটি টাকা খরচ পড়েছিল। এবার ২৩ নাবিকসহ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র জন্য কত লাখ ডলার দিতে হচ্ছে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এই বিষয়ে সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান জানান, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর চাপের মুখে মাত্র ৯ দিনের মাথায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে সোমালিয়ার দস্যুরা। এখন দুই পক্ষের হয়ে দর কষাকষি করবে তৃতীয় পক্ষের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। এটাতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, জলদস্যুদের যোগাযোগ করার অর্থ এই নয় যে, তারা ইতিমধ্যে মুক্তিপণ দাবি করে ফেলেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে দুই পক্ষ নিশ্চিত হবে যে, তারা সঠিক মানুষের সঙ্গে আলোচনা করছে কিনা। এই ভেরিফিকেশন সবচাইতে জরুরি। এরপর ধাপে ধাপে হবে দর কষাকষি। দুই পক্ষই শেষ পর্যন্ত যে অঙ্কের মুক্তিপণে সম্মত হবে- সেই পরিমাণ নগদ ডলার চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিতে হবে।এবার মুক্তিপণ কত দিতে হচ্ছে তা জানতে আরও সময় লাগবে। আবার নাও জানা যেতে পারে। কেননা এ বিষয়গুলো মালিকরা প্রকাশ করে না।

কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের জাহাজ এমভি জাহান মণি ১০০ দিন পর দস্যুদের কবল থেকে ২৫ নাবিকসহ ২৬ জনকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সে অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। আশা করছি এবারও সফল সমঝোতার মাধ্যমে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটিকে আমরা নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পারবো। এর আগে, ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর এমভি জাহান মণি ৪৩ হাজার ১৫০ টন নিকেল আকরিক নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে জাহাজটি সিঙ্গাপুর বন্দরে যাত্রাবিরতি দেয়। ২৭ নভেম্বর গ্রিসের উদ্দেশে জাহাজটি রওনা দেয়। ৫ ডিসেম্বর সুয়েজ ক্যানালের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটি দস্যুরা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর পর এর গতিপথ পাল্টে নেওয়া হয় সোমালিয়ার দিকে। দস্যুদের কবলে পড়ার আট দিন পর ১৩ ডিসেম্বর জিম্মি বাংলাদেশি নাবিকদের ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে মুক্তিপণ দাবি করে। লিওন নামে একজন দস্যুদের পক্ষে দরকষাকষি করেছিল। প্রথমে ৯ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছিল। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি দস্যুদের সঙ্গে মালিকরা একমত হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমভি জাহান মণি জাহাজে থাকা এক নাবিক বলেন, চূড়ান্ত দরকষাকষির পর ২০১১ সালের ১২ মার্চ দস্যুদের চুক্তিমতো একটি বিমানে করে মুক্তিপণের টাকা নেওয়া হয় সোমালিয়ায়। কথামতো ডলারভর্তি দুটি ওয়াটারপ্রæফ স্যুটকেস ছুড়ে মারা হয় সাগরে ভাসা দস্যুদের একটি স্পিডবোটের ওপর। যার সবই ছিল ১০০ ডলারের বান্ডেল। পরে এসব ডলার গুণে নেয় দম্যুরা। এরপর ১৪ মার্চ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হয় দস্যুদের কবল থেকে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে কবির গ্রæপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারেন গ্রæপের কর্মকর্তারা। জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার অফকোস্টে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুর কবলে পড়ে। জাহাজটিতে মোট ২৩ বাংলাদেশি নাবিক আছেন।

মুক্তিপণ,জলদস্যু
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত